আল্লামা শাহ আহমদ শফী রহঃ এর জীবনি - হেফাজতে ইসলাম এর আমীর


 


আল্লামা শাহ আহমদ শফী রহঃ বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ, বাংলাদেশ কওমী মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড এর চেয়ারম্যান, দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মাদরাসার মহাপরিচালক এবং বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টিকারী অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এর আমীর ছিলেন। 


জন্ম ও শিক্ষা:


জন্ম ১৯২০ সালে, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থানার পাখিয়ারটিলা গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন।


তাঁর পিতার নাম মরহুম বরকত আলী ও মায়ের নাম মরহুমা মেহেরুন্নেছা।


১০ বছর বয়সে তিনি  দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম মাদ্রাসায় ভর্তি হন। ওই বয়সে কিছুদিনের মধ্যে তিনি পিতা-মাতা উভয়কে হারান। এরপর ১০ বছর দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসায় অতিবাহিত করেন।


২০ বছর বয়সে (১৯৪১ সালে) তিনি ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদরাসায় ভর্তি হন। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে আলেমদের কাছে দূর্গ হিসেবে পরিচিত ছিল এ মাদ্রাসাটি। ওই সময় তিনি শায়খুল আরব ওয়াল আজম, সাইয়্যেদ হুসাইন আহমাদ মাদানী রহঃ হাতে বায়আত গ্রহণ করেন। অল্প সময়েই তিনি খেলাফতপ্রাপ্ত হন। তিনি তৎকালীন স্বীয় উস্তাদ মাদানী রহ. এর নেতৃত্বে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনেও যোগদেন।


কর্মজীবন:


আল্লামা শাহ্ আহমদ শফী একাধারে চার বছর দারুল উলুম দেওবন্দে অধ্যয়ন ও বিশ্ববিখ্যাত ধর্মবেত্তাগণের  অনুসরণের মাধ্যমে হাদীস, তাফসীর, ফিকাহশাস্ত্র বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করেন। তিনি আল্লামা মাদানির প্রতিনিধি হয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে আসেন।


এরপর চট্টগ্রামে  দারুল উলূম মুঈনুল ইসলামে শিক্ষক হিসেবে তিনি নিযুক্ত হন।


১৯৮৬ সালে হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক পদে যোগ দেন তিনি। এরপর থেকে টানা ৩৪ বছর ধরে তিনি ওই পদে ছিলেন। সেই সাথে শাইখুল হাদীস হিসেবে পাঠদান করেন।


অনসৈলামিক কর্মকাণ্ড বন্ধ ও ইসলামী প্রচারণার জন্য আল্লামা শফি ২০১০ সালে ‘হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ’ নামে একটি অরাজনৈতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন।

ভারতে বাবরী মসজিদ ধ্বংস, ফারাক্কা বাঁধ, তাসলিমা নাসরীন ইস্যু, সরকারের ফতোয়া বিরোধী আইন আন্দোলনে তৎকালীন সময়ে আল্লামা শফি ছিলেন প্রথম সারিতে।

২০১৭ সালে তার সঙ্গে বৈঠকের পর কওমির সনদের স্বীকৃতি এবং সুপ্রিম কোর্ট থেকে ভাস্কর্য অপসারণের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।


কওমী মাদরাসাসমূহের সর্বোচ্চ বোর্ড ‘আলহাইয়াতুল উলয়া লিলজামিয়াতিল কওমীয়া বাংলাদেশ’ এর চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন আল্লামা আহমদ শফী। তিনি কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশেরও (বেফাক) সভাপতি ছিলেন।


২০১৩ সালে নাস্তিক বিরোধী আন্দোলনের ডাক দিয়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেন।  ৫ই মে ঢাকা অবরোধের ডাক দিলে তার ডাকে সাড়া দিয়ে পঙ্গপালের মত লাখো মানুষ জড়ো হয় ঢাকায়



১৮ই সেপ্টেম্বর ২০২০ ঈসাব্দ শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ঢাকাস্থ গেন্ডারিয়া আসগর আলী হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন । ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজীঊন।


তার মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি জনাব আব্দুল হামীদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দেশের সকল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ শোক প্রকাশ করেন।


১৯ই সেপ্টেম্বর শনিবার হাটহাজারী মাদরাসা ময়দানে লাখো মানুষের জানাযায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে শেষ বিদায় জানানো হয় 


আল্লাহ তাআলা হযরতকে জান্নাতের উঁচু মাকাম দান করুন। তার রেখে যাওয়া খিদমাতকে তার উত্তরসূরীদের সামনে নিয়ে যাবার তৌফিক দান করুন।

No comments

Powered by Blogger.